বুধবার, অক্টোবর ২২, ২০২৫
৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কলম্বিয়ার ওপর শুল্ক বাড়াতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প

RNS News

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর, ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম

কলম্বিয়ার ওপর শুল্ক বাড়াতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প
ছবি : REUTERS

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মাদক পাচার নিয়ে চলমান উত্তেজনার আবহে ট্রাম্প কলম্বিয়ার ওপর শুল্ক বৃদ্ধির এবং দেশটির সমস্ত আর্থিক সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর এই মন্তব্যকে কলম্বিয়া সরকার 'অত্যন্ত গুরুতর' ও 'অপমানজনক' আখ্যা দিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা চাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই সংঘাত এখন ওয়াশিংটন ও বোগোটার মধ্যে সম্পর্কের নতুন তলানিতে পৌঁছেছে।

 

গত রবিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোকে 'অবৈধ মাদক নেতা' হিসেবে অভিহিত করেন। একই দিনে, মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ দাবি করেন, মার্কিন সামরিক বাহিনী ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদক পাচারকারী একটি জাহাজে হামলা চালিয়েছে, যা একটি কলম্বীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই ঘটনার পরই ট্রাম্প কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন।

 

ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় বলেন, "তাদের মাদকের বিরুদ্ধে কোনো লড়াই নেই— তারা মাদক তৈরি করে।" তিনি অভিযোগ করেন, কলম্বিয়া অবৈধ মাদক ব্যবসায় যুক্ত। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি ঘোষণা করেন, "আমি কলম্বিয়াকে দেওয়া সমস্ত অর্থ প্রদান বন্ধ করে দিচ্ছি।" এর পাশাপাশি, তিনি কলম্বিয়া থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের বিস্তারিত ঘোষণা সোমবার জানানো হবে বলেও জানান।

 

কোন ধরনের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করা হবে, তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার ছিল না। তবে ঐতিহাসিকভাবে কলম্বিয়া পশ্চিমা গোলার্ধে মার্কিন সহায়তার অন্যতম বৃহত্তম প্রাপক হলেও, চলতি বছর মার্কিন সরকারের মানবিক সহায়তা শাখা ইউএসএইড (USAID) বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই অর্থের প্রবাহ ইতিমধ্যেই অনেকাংশে সীমিত হয়ে এসেছে। বর্তমানে কলম্বিয়া থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা বেশিরভাগ পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে, যা বহু দেশের ক্ষেত্রেই ট্রাম্পের আরোপিত সর্বনিম্ন হার।

 

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমন কঠোর মন্তব্যের জবাবে কলম্বিয়ার সরকারও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কলম্বিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, "এই ধরনের অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর এবং কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের মর্যাদাহানি করে।" তারা পেত্রো এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন চাইবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর কলম্বিয়া তাৎক্ষণিকভাবে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূতকে আলোচনার জন্য বোগোটায় ফিরিয়ে এনেছে, যা দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির ইঙ্গিত দেয়।

 

প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'এক্স'-এ (সাবেক টুইটার) ট্রাম্পের মন্তব্যের সরাসরি জবাব দেন। তিনি বলেন, "মিঃ ট্রাম্প, কলম্বিয়া কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অভদ্রতা দেখায়নি... কিন্তু আপনি কলম্বিয়ার প্রতি অভদ্র ও অজ্ঞ।" তিনি আরও যোগ করেন, "আমি যেহেতু ব্যবসায়ী নই, তাই আমি মাদক ব্যবসায়ীও নই। আমার হৃদয়ে কোনো লোভ নেই।"

 

পেত্রো বিশেষত ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক বাহিনীর মাদক পাচার সন্দেহে জাহাজ লক্ষ্য করে চালানো হামলার বিরোধিতা করে আসছেন। তাঁর অভিযোগ, এই হামলাগুলোতে বহু মানুষ নিহত হয়েছে এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা বেড়েছে। পেত্রো দাবি করেন, সর্বশেষ যে জাহাজটিতে হামলা হয়েছে, সেটি কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নয়, বরং তা ছিল একটি 'সাধারণ পরিবারের' সম্পত্তি। উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বরের শুরুর দিক থেকে এই ধরনের মার্কিন হামলায় অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

অন্যদিকে, মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব হেগসেথ 'এক্স'-এ নিশ্চিত করেছেন যে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের 'ইউএসসাউথকম’ (USSOUTHCOM) দায়িত্বের এলাকায়, যার মধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলও অন্তর্ভুক্ত, একটি জাহাজে হামলা চালিয়ে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, জাহাজটি বামপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠী 'ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি' (ELN)-এর সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং অবৈধ মাদক পাচারে জড়িত ছিল। যদিও এই দাবির সপক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ দেননি।

 

ওয়াশিংটন ও বোগোটার এই সংঘাত নতুন নয়। চলতি বছরের শুরুতে গুস্তাভো পেত্রো যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উড়োজাহাজে করে কলম্বিয়ার প্রত্যাবাসিত অভিবাসীদের গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলেন, যার জেরে ট্রাম্প শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। এছাড়াও, গত মাসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সময় পেত্রো একটি ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে যোগ দেন এবং মার্কিন সৈন্যদের প্রতি ট্রাম্পের আদেশ অমান্য করার আহ্বান জানান। এই ঘটনার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পেত্রোর ভিসা বাতিল করেছিল।

 

কলম্বিয়া দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ মাদক সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। গত বছর পেত্রো কোকা-উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোকে দমন করার জন্য ব্যাপক সামাজিক ও সামরিক হস্তক্ষেপের অঙ্গীকার করেছিলেন, যদিও সেই কৌশল এখনো তেমন সাফল্য দেখায়নি।

 

সব মিলিয়ে, মাদক নিয়ন্ত্রণ ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে এই সরাসরি সংঘাত বিশ্বের সামনে দুই ঐতিহাসিক মিত্রের মধ্যেকার সম্পর্ককে এক অভূতপূর্ব সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

-BBC